কোন জাতি কতটুকু সভ্য, সেটি নির্ধারণের মাপকাঠি বেশ জটিল এবং বহু-মাত্রিক। সভ্যতার মান পরিমাপের জন্য নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে:

১. নৈতিকতা ও মানবিকতা

একটি জাতির নৈতিক মূল্যবোধ এবং মানবিক আচরণ গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বল ও অসহায়দের প্রতি সহানুভূতি, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান, সহনশীলতা এবং সামাজিক সাম্য—এসব গুণাবলী একটি জাতির মানবিক মুল্যবোধকে প্রকাশ করে এবং সভ্যতার অন্যতম মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

২. শিক্ষা ও জ্ঞান

শিক্ষার প্রসার, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ, এবং গবেষণার মনোভাব জাতির সভ্যতার মান উন্নত করে। শিক্ষিত সমাজ যুক্তিবাদী, উদ্ভাবনী এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দেয়, যা সভ্যতার অগ্রগতিতে সহায়তা করে।

৩. আইন ও বিচার ব্যবস্থা

একটি সভ্য জাতির জন্য সুশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা অপরিহার্য। সঠিক বিচার ব্যবস্থা, সবার জন্য সমান আইনের প্রয়োগ এবং আইন-আদালতের প্রভাব এই বিষয়গুলোর মাধ্যমে জাতির ন্যায়পরায়ণতার মান বোঝা যায়।

৪. সামাজিক সৌহার্দ্য ও শৃঙ্খলা

যে জাতির মধ্যে ঐক্য, পারস্পরিক সহমর্মিতা এবং শৃঙ্খলাবোধ শক্তিশালী হয় সে জাতি হয় পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সহযোগিতামূলক। বহুজাতিক সমাজ ব্যবস্থায় বৈষম্যহীন এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত জাতিগোষ্টির মধ্যে জাতিগত সহাবস্থান একটি উন্নততর সভ্যতার পরিচায়ক।

৫. উন্নত সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ

শিল্প, সংগীত, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির উন্নত মানও সভ্যতার পরিচায়ক। এগুলো জাতির চেতনার গভীরতা, সৃজনশীলতা এবং মূল্যবোধকে তুলে ধরে।

৬. প্রযুক্তি ও অবকাঠামো

উন্নত প্রযুক্তি ও অবকাঠামো একটি জাতির অগ্রগতির প্রতীক। তবে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং তা মানুষ ও পরিবেশের উপকারে ব্যবহার করার ক্ষমতা সভ্য জাতির প্রমাণ।

৭. পরিবেশ সচেতনতা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ

পরিবেশের প্রতি সচেতনতা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণে জাতির সচেতনতা সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

৮. অধিকার ও সমতা

নারীর অধিকার, শিশু অধিকার, সংখ্যালঘু অধিকার, ধর্মীয় অধিকার ও লিঙ্গ সমতার প্রতি জাতির মনোভাব একটি জাতির সভ্যতা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

এই মাপকাঠিগুলোর উপর ভিত্তি করে একটি জাতির সভ্যতা মূল্যায়ন করা হয়, যদিও কোনো জাতি কখনোই সকল ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। তবে এসব গুণাবলি জাতির মূল্যবোধ, উন্নয়ন এবং অগ্রগতির জন্য একটি সামগ্রিক মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়।