মিশরের পিরামিড রহস্য একদিকে যেমন সেরা প্রত্নতাত্ত্বিক শিল্প কর্ম অন্য দিকে তেমনি পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি।আবার মানব সৃষ্ট শ্রেষ্ট স্থাপত্য নিদর্শনও, এর থেকে জটিল কোন শিল্প কর্ম এখনো অবদি কেউ সৃষ্টি করতে পারেনি। অনেক অনেক গবেষণা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের পরও এ অসাধারণ স্থাপনার গঠন নিয়ে খুব অল্পই তথ্য খুঁজে বের করা সম্ভব হয়েছে।
এত বড় বড় পাথর গুলো কিভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো হয়েছে ছিল, কোন অদ্ভুত পদার্থ দিয়ে তৈরি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল, কিভাবেই বা পাথরগুলো এতটা উপরে তোলা হয়ে ছিল, এমন হাজারো প্রশ্নের সবটাই যেন রহস্য হয়ে আছে এখনো।
কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল পিরামিড
ধারণা করা হয় প্রায় ১০-১৫ বছর সময় লেগেছিল এই পিরামিড তৈরিতে। এটার গঠনশৈলী এতটা চমৎকার আর জটিল যে বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রাচুর্যের সময়ও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে পিরামিডের গঠনকৌশল জানতে পারেনি। যা জানা যায় তা হল পিরামিড বানাতে যারা কাজ করে ছিল তারা খুব শক্তিশালী ছিল এবং তারা খাঁটি মিশরীয় ছিল। তারা কোন সাধারণ মজুর বা রাজমিস্ত্রি ছিল না।
প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি মজুরের প্রয়োজন হয়েছিল পুরো স্থাপনার কাজ শেষ করতে। তাহলে ভেবে দেখুন কতটা বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল পিরামিড তৈরির জন্য।
শুধু গিজার গ্রেট পিরামিডটি বানাতে প্রায় ২৩ লক্ষেরও বেশি চুনাপাথরের ব্লক, ৮ হাজার টন গ্রানাইট আর ৫ লক্ষেরও বেশি সিমেন্টের পুরু ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কিভাবে এত এত টন জিনিস বয়ে আনা হয়েছিল সেই যুগে এটাও কিন্তু একটা বিরাট প্রশ্ন। যতদূর জানা যায় পাথরের এই খন্ড গুলো পিরামিডের কাছাকাছি কোন খনি থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
আরও জানা যায় মিশরের মজুরেরা কাঠের ঠুকরো হাতুড়ি দিয়ে পাথরের গায়ে গেঁথে দিত, তারপর সেগুলোকে অনেকদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কাঠের ঠুকরো গুলো পানি শুষে নিয়ে ফুলে উঠত আর তখন পাথরগুলো ভেঙে টুকরো হয়ে যেত। পাথরগুলো ঠুকরো হয়ে গেলে সেগুলোকে নিয়ে আসা হতো নীলনদ দিয়ে পিরামিড বানানোর জায়গায়। এটাই এখনো পর্যন্ত জানা সব থেকে বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা।
এগুলো থেকেও পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় না কিভাবে আসলে সত্যিকার অর্থে পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল। কারণ প্রথমে যদি পাথরের ওজনের কথাই ধরি তাহলে কিছু কিছু পাথরের ওজন ৭০ টনেরও বেশি। আর বেশির ভাগ পাথর খন্ডের ওজন আড়াই টনের কাছাকাছি। বর্তমানে স্থাপনার কাজে ব্যবহার করা ক্রেনগুলো ২০ টনের বেশি ওজন নিতে পারে না। কিন্তু তারা কিভাবে ৭০ টনের বেশি ওজনের পাথরগুলো নিয়ে কাজ করছিল।
পিরামিড তৈরির বিষয়ে প্রচলিত দুটি ধারণা
এ ব্যাপারে দুটো ধারণা বেশি প্রচলিত রয়েছে। প্রথম ধারণা অনুযায়ী পাথর গুলোকে নৌকা দিয়ে বয়ে নিয়ে আসার পর কাঠের কোন উঁচু কাঠামো বা র্যাম দিয়ে সেগুলোকে ঠিক জায়গায় বসানো হয়েছিল। কিন্তু কাঠের কাঠামো দিয়ে উপরে টেনে উঠানোও প্রচুর সংখ্যক মানুষের পক্ষে অসম্ভব মনে হয়। আর এই একটা কারণে এই ধারণাটিকে সত্যি বলে মেনে নেওয়া কঠিন।
তবে সেক্ষেত্রে প্রথমের থেকে দ্বিতীয় ধারণাটি অনেকের কাছে বেশি যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়েছে। দ্বিতীয় ধারণা মতে, পদার্থ বিজ্ঞানের প্লবতা ধর্ম ব্যবহার করে আর ঠিক সেই অনুযায়ী কাঠামো তৈরী করে পাথরগুলোকে ভাসিয়ে নেওয়া হয়েছিল নির্দিষ্ট জায়গা গুলোতে। যদিও প্লবতা ধর্ম কাজ করার কৌশল আর পানির চেম্বারে যে প্রচন্ড পরিমান চাপ দরকার তা কাগজে কলমে সহজ মনে হলেও বাস্তবে তা বড়ই কঠিন। তবে এটাও একটা শুধুমাত্র ধারণা, কোন প্রমাণিত সত্য নয়।
যদিও মিশরের সভ্যতার লোকজন খুবই বুদ্ধিমান ছিল তবুও এতো কঠিন একটি স্থাপনা তৈরী করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না তাদের জন্য। কিভাবে গিজার তৈরি পিরামিড গুলো পৃথিবীর সব থেকে নিখুঁত আর নিৰ্ভুল ভাবে তৈরী স্থাপনা। আপাতত ধরে নেয়া যায় তেরো একর জমিতে তৈরি স্থাপনা গুলোতে ছোট খাট ভুলগুলো ধরা পড়েনা বলে এতটা নির্ভুল মনে হচ্ছে।
কিন্তু না, পিরামিডের গঠন খুবই অলোকিক আর আশ্চর্যজনক ভাবে চাঁদ বিভিন্ন নক্ষত্র ও সূর্যের অবস্থানের সাথে মিল রেখে তৈরী করা। যে বিষয়টি কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞানী, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও জ্যোতিরবিজ্ঞানীদের আলোচনার বিষয় হয়ে আসছে। দেখতে ত্রিভুজ আকৃতির এই পিরামিডগুলো গবেষক ও সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে।
অদ্ভুদভাবে পিরামিডের উচ্চতার গুণফল পৃথিবীর মেরু ব্যাসার্ধের সমান
পিরামিডের গঠন কৌশল একে মানবসৃষ্ট সব থেকে অভেদ্য রহস্যে পরিণত করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যদি পিরামিডের উচ্চতাকে 43200 গুণ করা হয় তাহলে গুনফল পৃথিবীর মেরু ব্যাসার্ধের সমান হবে। হয়তো হতে পারে এটা কোন কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু ভিত্তি প্রস্তকে যদি একই সংখ্যা দিয়ে গুণ করেন তাহলে এর পরিধি হবে পৃথিবীর পরিধির সমীকরণের সমান।
তবে এটিও হতে পারে কাকতালীয় কারণ সেই সময়কার মানুষ পৃথিবী সম্পর্কে এতো কিছু জানত কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে গিজার পিরামিড তিনটি উত্তর মেরুর দিকে সারিবদ্ধ ভাবে বানানো হয়েছিল। বলা হয়, এই পিরামিডের অবস্থান ভুখন্ডের একদম কেন্দ্রে।
সেই সাথে এটাও জেনে অবাক হবেন যে, এটাই বিশ্বে এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া মাত্র আট পার্শ্বযুক্ত পিরামিড এবং পিরামিড এর কেন্দ্রগুলো অসাধারণ কৌণিক অবস্থায় রয়েছে। যদিও এই অসাধারণ নির্মাণ কৌশল ভূমি থেকে বা দূর থেকে দেখলে বুঝা যায় না। বুঝা যায় শুধু উপর থেকে দেখলে এবং বছরের বিশেষ একটা সময়ে শরৎ ও বসন্ত কালের ভোরে ও সূর্যাস্তের আলোয় কেবলমাত্র দেখা মিলে এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকলার। এই পিরামিডের ব্লকগুলো লাগানোর জন্য যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল তা পাথরের চেয়েও বেশি শক্ত আর বহুবছর ধরে গবেষণা করেও এতে ব্যবহৃত রাসায়নিক যৌগ আবার নতুন করে বানানো একেবারে অসম্ভব।
পিরামিড নির্মাণে ”বল এন্ড সকেট” কাঠামোর ব্যবহার
এতো বছর পরও পিরামিডের অনড় ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার একমাত্র কারণ হচ্ছে এর ভিত্তি প্রস্তর ”বল এন্ড সকেট” কাঠামোতে বানানো। যার উচ্চতা বিস্ফোরণ বা ভুমিকম্প ঠেকে দিতে সক্ষম।
সেই সাথে মিসরীয় মরুভূমির প্রচন্ড তাপের মাঝেও পিরামিডের ভিতরের তাপমাত্রা পৃথিবীর স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার সমান অথাৎ ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে। তাছাড়া রাতের আকাশে থাকা Orion’s Belt বা কালপুরুষ নামে তিনটি নক্ষত্র এর অবস্থানের সাথে গিজার তিনটি পিরামিড এর অবস্থানের হুবহু মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে। এই সবগুলো ব্যাপারই হয়তো কাকতালীয় হতে পারে আবার সবগুলো ঘটনার পিছনে খুব গভীর আর যথার্থ কোন কারণও থাকতে পারে।
ঠিক কী উদ্দেশ্যে পিরামিডগুলো বানানো হয়েছিল? এই প্রশ্নের জবাবে. সাধারণভাবে একটি কথা প্রচলিত আছে তা হল ফারাও রাজা ও তার রানীদের সমাধিস্থল এবং মৃত্যুর পরবর্তীকালকে সহজ ও আরামদায়ক করতে এই পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল। মিসরীয়রা জন্মের পর থেকে তাদের মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে চিন্তিত থাকত। আর ফারাওদের জন্য পিরামিড হল সম্মান ও সুখের জায়গা। ফারাওদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানও ছিল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল।
মৃতদেহকে লিলেন কাপড়ে আর সুগন্ধি জাতীয় পদার্থ দিয়ে আবৃত করে কফিনে ভরে পিরামিডের গভীরে সংরক্ষণ করা হতো। আর মৃতদেহের সাথে স্বর্ণের অলংকার, ফল, কাপড়, নৌকা আরো অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে রাখত।
বলা হয় সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সাথে মিল রেখে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা হতো। ফারাওদের দেহকে বাইরের মহাজাগতিক জগৎ থেকে আলাদা করে রাখতে তাদের দেহ সংরক্ষণ করা হতো। যেন পরবর্তীতে তাদের আত্মা তাদের দেহকে চিনতে পারে। আর এই দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটি করা হতো মমিকরণের মাধ্যমে।
তবে পিরামিডের একদম গভীরে খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত মমিগুলো ছাড়া আর সবগুলো মমি চুরি হয়ে গেছে। আর সেগুলো পুনরুদ্ধার করাও সম্ভব হয় নি। সেই সাথে মমিগুলো যে কক্ষে রাখা হয়েছিল সেখানে মমিগুলোর কোন তথ্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি ফারাওদের সমাধি স্থাপনের কিছু দিনের মধ্যে মমি লুটের ব্যাপক ঘটনা ঘটে। সে কারণে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ফারাওদের মমি সংরক্ষণের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা নিয়ে ছিল তারা।
পিরামিড ছাড়াও পাহাড়ের গোলক ধাঁধায় ভরা গোপন কোন কক্ষে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো ফারাওদের মরদেহ। যেমন ১৯২২ সালে কিংস উপত্যকায় বিখ্যাত ফারাও তুতানখাতেনের মমি আবিষ্কার করা হয়। যে কারণে মনে হয় পিরামিড শুধু মিশরের রাজা রানীদের দেহ সংরক্ষণের জন্য না। আরও বড় আর নির্দিষ্ট কোন কারণে তৈরী করা হয়েছিল।
রহস্যময় ও পাইল সুড়ঙ্গ
মিশরের এই পিরামিডগুলো জুড়ে রয়েছে অনেক রহস্য আর পাইল সুড়ঙ্গগুলো তার মধ্যে একটি অন্যতম রহস্য। প্রথমে ধরে নেওয়া হয়েছিল এগুলো পিরামিড তৈরির সময় ভেতরে পাইল চলাচলের উদ্দেশ্য তৈরি করা হয়েছে। যদিও এটাকে এখন একটা নিছক ভুল হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। কারণ কিছু কিছু সুড়ঙ্গ কিছু দূর যাওয়ার পর চুনাপাথরের খন্ড দিয়ে একদম বন্ধ করে দেয়া।
আবার পিরামিডের গঠন লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, পিরামিডের মোট তিনটি আলাদা আলাদা বড় কক্ষ রয়েছে যার একটাকে ভিত্তি কক্ষ ও দুটোকে রাজা ও রানীর কক্ষ বলা হয়। সম্প্রতি চারটা সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করা হয় যেগুলো উত্তর আর দক্ষিণের প্রাচীর থেকে আসা এবং বিশ মিটার চওড়া। অনেকদিন থেকে মানুষ বিশ্বাস করতো এই সুড়ঙ্গগুলো প্রতিটা কক্ষের সাথে যুক্ত থাকার গোপন রাস্তা ছিল।
কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা যায় রাজার কক্ষের দুটি সুড়ঙ্গ উত্তর আর দক্ষিণের দেয়ালে গিয়ে শেষ হয়েছে। যদিও মিশরীয়রা অনেকে বিশ্বাস করে এই সুড়ঙ্গগুলো দিয়ে রাজার আত্মা উত্তর আর দক্ষিণ আকাশের নক্ষত্রের ভ্রমণে বের হতো। এই বিশ্বাসটাকে সত্যি ধরলে অন্তত বানানোর একটা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
যাই হোক, রানীর কক্ষের সুড়ঙ্গগুলো কিন্তু আরও রহস্যময়! একটা রিমুট নিয়ন্ত্রিত ক্যামেরা সুড়ঙ্গে প্রবেশ করালে দেখা যায় প্রায় প্রতিটা সুড়ঙ্গই কিছুটা যাওয়ার পর চুনাপাথরের দরজা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া আর তার সাথে দুটো ধাতব ও আংটা লাগানো।
যদিও পুরো পিরামিডের আর কোথাও লোহা বা ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয় নি। ধারণা করা হয়েছিল এই দরজাগুলোর পেছনে আরও ছোট ছোট কক্ষ রয়েছে। খুব সম্প্রতি আরেকটি রোবটকে সুড়ঙ্গের ভেতরে পাঠানো হয়েছিল আর এবার রোবটটি চুনাপাথরের দরজা ফুটো করে আরেকটি কক্ষ আবিষ্কার করে।
পিরামিডের অভ্যন্তরে রোবট ক্যামেরা প্রেরণ
নতুন আরেকটি প্রচেষ্টায় একটি রোবট ক্যামেরাকে একটি ফাঁকা কক্ষের ভিতর পাঠানো হয়। ক্যামেরাটি প্রায় ৪৫০০ বছর পুরোনো লাল রঙের পাথরের উপর খোদাই করা হায়ারোগ্লিফিক খুঁজে পায়। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিটা সুড়ঙ্গই কোন প্রতীকী অর্থ বহন করে। আর হায়ারোগ্লিফিক গুলোই পিরামিডের অন্যান্য রহস্যের চাবিকাঠি।
এই বিশাল স্থাপনায় আবার এই সুড়ঙ্গগুলো আবিষ্কার করা হয়েছে অবশ্যই কোন গভীর কারণে। সম্ভবত, এমন অনেক সুড়ঙ্গই অনাবিস্কৃত অবস্থায় রয়েছে। ভবিষ্যতে সেই সুড়ঙ্গগুলো আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।
অসাধারণ অদ্ভুত এই পিরামিডগুলো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, তথ্য, ধারণার কোন অভাব নেই। এতো সব তথ্য আর ধারণার মধ্যে এটাও ধরা হয় যে ভিনগ্রহ বাসিদের সহায়তায় ছিল এই পিরামিডের গঠনের পেছনে। না হলে যে সময়ে এ পিরামিডগুলো বানানো হয়েছিল তখন পৃথিবীর নক্ষত্র, বিষুব রেখা, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বা পরিধি কোনটা নিয়ে মানুষের এতো গভীর জ্ঞান ছিল না।
তাহলে কি ভিনগ্রহ থেকে ভ্রমণে আসা প্রাণীরাই তৈরি করেছিল পিরামিড?
অনেকেই ধারণা করেন মিশরীয়রা ভিনগ্রহের কাছ থেকে পাওয়া উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল পিরামিডের গঠন কৌশল নির্ধারণ করতে। অথবা কোন মানুষের সাহায্য ছাড়াই কোন ভিনগ্রহ থেকে ভ্রমণে আসা প্রাণীরাই এটা তৈরি করেছে। এই ধরণের ধারণার পিছনে কিছু প্রমাণও দেখানো হয়। যেমন যেভাবে সারিবদ্ধ ভাবে পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল সেটা নিৰ্ভুলভাবে অনেক উঁচু থেকে দেখে ঠিক করা সম্ভব।
ভূমিতে দাঁড়িয়ে অনেক হিসাব নিকাশ করেও এত নিৰ্ভুল এদের অবস্থান নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া এটাও অসম্ভব যে, কোন রকম কম্পাস এর ব্যবহার ছাড়াই উত্তর মেরুর দিকে মুখ করে বানানো হয়েছে। এত নিখুঁত সারিবদ্ধ গঠন আর প্রতিটি উপাদানের নির্ভুল অবস্থান সেই সময়ের বিচারে এক প্রকার অসম্ভব অথবা অনেকটা কষ্টসাধ্য।
ঠিক ওই সময় মিসরীয়দের পক্ষে বছরের নির্ভুল হিসেবও বের করা সম্ভব হয়েছিল বলে জানা যায় না। কিন্তু গ্রীষ্মের সূর্যাস্তের সময় নিখুঁতভাবে সূর্য দুটো পিরামিডের নিচের মিলিত স্থানে অবস্থান করে। যে কারণে অনেকে বিশ্বাস করেন শুধু মাত্র ভিনগ্রহের অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি দিয়েই পিরামিডের অবস্থান নির্ধারণ বা বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছিল। যে কারণে আমাদের উন্নত প্রযুক্তি দিয়েও পিরামিডের খুব সামান্য রহস্যই উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।
Leave a comment